‘কোমা’ হল একটি গ্রীক শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ হল ‘ঘুমন্ত অবস্থা’। কোনো ব্যক্তি যদি লম্বা সময়ের জন্য অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে থাকেন তখন তিনি কোমায় রয়েছেন বলে মনে করা হয়। কোমা কোনো ধরনের অসুখ নয়, বরং কোমা হল বাঁচা মরার মধ্যবর্তী অবস্থা অর্থাৎ না মরে বেঁচে থাকা। শারীরিক ও মানসিক ভাবে যখন আমরা সুস্থ জীবনযাপন করি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলি বিভিন্ন ঘটনায় সাড়া পেয়ে কর্মক্ষমতা আগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু যখন কোনো ব্যক্তি পুরোপুরি কোমা অবস্থায় থাকে তখন তাঁর স্নায়ুকোষ গুলির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।
কোনো ব্যক্তি যখন অঘোর অবস্থায় থাকে তখন তাকে কোনো না কোনো ভাবে ঠিক জাগিয়ে তুলতে পারবেন। কারন সেই মুহূর্তে তার মস্তিষ্ক আপনার কার্যকলাপে সাড়াপ্রদানে সক্ষমতা প্রকাশের উপযুক্ত। কিন্ত কোমায় থাকা ব্যক্তিকে আপনি হাজার সাড়া প্রধানের মাধ্যমেও জাগিয়ে তুলতে পারবেন না। সেই অঘোর ভাব কাটিয়ে রোগী কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে কিনা তা হয়তো কারোর জানা নেয়। দিন যত এগিয়ে যেতে থাকে রোগী ততই খারাপের দিকে যেতে থাকে। এবং তাঁর থেকে সুস্থ সম্ভবনার আশা আমাদের মিলিয়ে যেতে থাকে।
কীভাবে কোমা হয় বা কীভাবে মানুষ কোমাতে প্রবেশ করে ?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বড় কোন দুর্ঘটনার কারনে মাথায় প্রাপ্ত আঘাতই কোন ব্যক্তির কোমায় চলে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারন হয়ে থাকে। সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে তার আঘাতের ধরন ও তীব্রতার উপর। সেরেব্রাল হেমারেজ বা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হলে অথবা সেরেব্রাল থ্রম্বোসিস অর্থাৎ মস্তিষ্কের নালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তখন কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের দেহের মোট অক্সিজেন চাহিদার এক-চতুর্থাংশ যা মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয় তা আমাদের রক্তের মাধ্যমে মস্তিস্কে পৌঁছায় কোন কারনে ৫-৬ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকলে স্নায়ুকোষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে যার ফলে মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে ।
যে যে সমস্যা থেকে কোমার অবস্থা হতে পারে তা হল-
ট্রমাঃ- বড় কোন দুর্ঘটনায় প্রাপ্ত মাথার আঘাত থেকে মস্তিষ্কের স্ফীতি বা রক্তপাত হওয়ার জন্য রেটিকুলার আক্টিভেটিং সিস্টেম এর ক্ষতি হতে পারে। মস্তিষ্কের এই অংশটি উদ্দীপনা এবং সচেতনতা ঘটায়। এরফলে কোমায় চলে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।
স্ফীতিঃ- আঘাত লাগা ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক কারনে মস্তিষ্কের টিস্যুর স্ফীতি হতে পারে। অনেক সময় মস্তিস্কে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিলে কিংবা হরমোনের অসঙ্গতিতে এই স্ফীতি ঘটে থাকতে পারে। এর থেকেও মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে।
স্ট্রোকঃ- যখন ব্রেন স্টেমের কোনও প্রধান অংশে রক্তপ্রবাহ হয় না কিংবা স্ফীতি-সহ রক্তের স্বাভাবিক সরবরাহ প্রনালি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন ওই ব্যক্তির কোমায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ব্লাড সুগারঃ- ডায়াবেটিক রোগীদেরও কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি তাদের রক্তের সুগার লেভেল অতিরিক্ত বাড়ে অথবা কমে যায়, তখন তাকে ‘ডায়াবেটিক কোমা’ বলা হয়।
রক্তক্ষরণঃ- মস্তিষ্কের স্তরে রক্তক্ষরণের জন্য স্ফীতি বা আঘাতপ্রাপ্ত অংশে সংকোচন দেখা দিলে কোমা হতে পারে। সংকোচনের জন্য মস্তিষ্ক সরে গিয়ে ব্রেইনস্টেম ও আর. এ. এস. এর
ক্ষতি করতে পারে।
সিজারঃ- একক সিজার থেকে বিরল ক্ষেত্রেই কোমা হয়। তবে নিরবচ্ছিন্ন সিজার থেকে দীর্ঘস্থায়ী অচেতনতা এবং কোমা হতে পারে।