এলাচ এমন একটি মশলা যা প্রতিটি পরিবারের রান্নাঘরে যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। এটি উষ্ণ তীব্র স্বাদ সহ একটি মনোরম সুবাস আছে। এটি বিভিন্ন রান্নায় যোগ করে অনন্য গন্ধ ও স্বাদ। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মশলা যা প্রায়শই ‘মশালার রানী’, ‘স্বর্গের দানা’ এবং আরও অনেক নামে গৌরবযুক্ত করা হয়। এলাচ শুধু স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য নয় এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে আমাদের অনেকেই এই মশলার স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে জানি না। স্বাস্থ্যের জন্য এলাচের উপকারিতা শেষ করা যাবে না। তাই জেনে নেওয়া যাক সুগন্ধযুক্ত এলাচের অসাধারন কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
হার্ট:- এলাচের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হার্টের জন্য ভালো। এতে রয়েছে ফাইবার যা কোলেস্টরল কম করতে সাহায্য করে। এছাড়া যাদের উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা আছে তাঁদের দারুণ একটি ওষুধ এলাচ। বেশিরভাগ হার্টের চিকিৎসকেরা আজকাল রাতের খাদ্য তালিকায় এলাচ যোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
উচ্চ রক্তচাপ:- যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন ,তাদের জন্য এলাচ উপকারী ঔষধ হিসাবে কাজ করে। কালো এলাচ হার্টকে সুস্থ রাখে ,রক্তচাপ ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা:- এলাচ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে এবং অ্যাসিডিটি দূর করতে চিবাতে পারেন একটি এলাচ। এটি ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। পেটের যে কোনো সমস্যা যেমন বদহজম নিরাময়ে সহায়তা করে। তাই এক কাপ গরম পানিতে এলাচ পিষে দিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন হজমের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন- লেবু খাওয়ার অসাধারন স্বাস্থ্য উপকারিতা!
শ্বাসকষ্ট:- শ্বাসকষ্টের সমস্যা ভোগ করা মানুষদের জন্য এক অন্যতম উপকারী ঔষধ হল এলাচ। যারা সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা ও রক্ত সঞ্চালনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা মধু, লেবুর রস ও গরম পানির সঙ্গে এলাচ পিষে মিশিয়ে পান করলে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজে। যারা হুপিংকাশি ও ফুসফুস সংক্রমণের মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য এলাচ খুবই উপকারি।
মাথাব্যাথা:- গরম পানিতে এলাচ গুড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। মাথা ব্যথায় ভুগে থাকলে এক কাপ গরম এলাচ চা খেয়ে দেখুন। দেখবেন মাথা ব্যাথা নিমেষেই দূর হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও এলাচ চা মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
কিডনি:- কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে এলাচ। কারণ এটি মূত্র ত্যাগকে উদ্দীপিত করে এবং ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনিতে জমা হওয়া ক্যালসিয়াম ও ইউরিয়া দূর করতেও সাহায্য করে। নিয়মিত এলাচ গ্রহণ করলে বিভিন্ন ধরণের কিডনির সমস্যা, মূত্র থলির সমস্যা, কিডনি পাথর, নেফ্রাইটিস, মূত্র ত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা ও ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের সমস্যা নিরাময়ে কাজ করে। এটি প্রায়ই মূত্র নালীর সংক্রমণের চিকিৎসায় ও ব্যবহার করা হয়।
মুখের দুর্গন্ধ:- মুখে গন্ধের সমস্যা থাকলে ধারে কাছে কেউ ঘেঁষতে চায় না। আপনার ব্যক্তিত্ব বা সৌন্দর্য যতই থাকুক, মুখে গন্ধ হলে কেউ আপনার সংস্পর্শে আসতে চাইবে না। ভালো ভাবে মুখ পরিস্কার করার পরও কারো কারো মুখে থেকে যায় দুর্গন্ধ। তাই একটি এলাচ নিয়ে চিবোতে থাকুন। এলাচের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের ভেতরের অংশের অর্থাৎ মাড়ি ও দাঁতের খুব উপকার করে। এলাচের ঝাঁঝালো স্বাধ নিশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে ও তরতাজা করে তোলে।
আরও পড়ুন- কিডনিকে ভালো রাখতে চাইলে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে!
ক্যান্সার:- গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এলাচ খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক ভাবে ক্যান্সার চিকিৎসা করতে এলাচের কোনো জুড়ি নেই। এই জন্য ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত এলাচ খাওয়া উচিত।
রুপ চর্চা:- এলাচে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। যা ত্বকের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকলে তা দূর করতে এলাচ বেটে দাগে নিয়মিত লাগালে দাগ অতিসহজেই চলে যাবে। এছাড়া এলাচের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ, রিংকেল ইত্যাদি পড়তে বাঁধা প্রদান করে।
চুলকানি প্রতিরোধে:- চুলকানি ভালো ভোগাচ্ছে, সাধারণ মলম ব্যবহারেও রেহাই নেই। এ ক্ষেত্রে এলাচ চুলকানি প্রবন জায়গায় লাগিয়ে এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। খুব সহজেই উপকার পাওয়া যাবে।