একটি স্মার্ট কালো পোশাকের সেই ভেসে ওঠা সাদা খুশকিগুলি যে কাউকে বিব্রত করতে পারে। খুশকি হল একটি ক্ষুদ্র তবে অত্যন্ত কৌতুকপূর্ণ সমস্যা যা কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি আনন্দময় অনুষ্ঠানকে নষ্ট করতে পারে। শুধু শীতকালে নয়, কিছু লোকের জন্য, সারা বছরই খুশকি একটি গুরুতর সমস্যা। আপনি কি তাদের একজন? তারপরে, খুশকির সাথে আপনার লড়াইকে আপনার চেহারা সম্পর্কে হতাশ করে না! ছত্রাকের মালাসেসিয়া দ্বারা সৃষ্ট, খুশকি পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে একটি শুকনো এবং চুলকানির মাথার ফলস্বরূপ। যদিও আমাদের মধ্যে অনেকেই এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য একটি অ্যান্টি ড্যানড্র্যাফ শ্যাম্পু অবলম্বন করে থাকি। আপনি কি জানেন যে আপনি এই সমস্যাটিও সমাধান করতে পারেন ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর করার জন্য অনেকের সহায়তা? হ্যাঁ, খুশকির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার অত্যন্ত কার্যকর।
খুশকি কী?
খুশকি ত্বকের বিশেষ একটি অবস্থাকে বুঝায়, যা মূলত মাথার মধ্যে বেশী দেখা যায়। এতে চর্মরেণু মাথার ত্বক থেকে ভেসে উঠে আসে, এবং ঝরে পড়ে। খুশকি আত্মসম্মানের এমনকি সামাজিক সমস্যাও তৈরী করতে পারে। এ অবস্থার আরও ভয়াবহ রূপ হলো সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ও চুলকানিপ্রবণ অবস্থা।
আরও পড়ুন- আপনি ডায়াবেটিস কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন!
খুশকির স্পষ্ট কোন কারণ জানা না গেলেও, ধারণা করা হয় জিনগত ও পরিবেশগত কারণে খুশকি হতে পারে। শীতকালে যেটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। খুশকির পেছনে কারণ হিসেবে অপরিচ্ছন্নতাকে দায়ী করা হলেও, মূলত তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি হল মাথার ত্বকের শুকনো মৃত কোষ৷ স্বাভাবিক নিয়মে কিছু মৃত কোষ সবার মাথাতেই থাকে, তা কিন্তু চোখে পড়ার আগেই ঝরে পড়ে যায়৷ সমস্যাটা যখন বাড়ে, তখনই তা বাইরে থেকে চোখে পড়ে৷ লক্ষণের উপর ভিত্তি করে খুশকির রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়।
খুশকির কোন সাধারন প্রতিকার নেই। অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম বা স্যালিসিলিক অ্যাসিড ব্যবহার করে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের অর্ধেকই এ অবস্থার স্বীকার, যেখানে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে আক্রান্তর হার বেশী। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গার লোকই খুশকিতে আক্রান্ত হয়।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরোয়া প্রতিকারের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো:-
বেকিং সোডা:- বেকিং সোডা খুশকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কার্যকর প্রতিকার হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনাকে যা করতে হবে তা হল হালকা পানিতে মাথা ভিজিয়ে নিয়ে খানিকটা বেকিং সোডা পুরো মাথায় মেখে নিন। ভালো করে জোরে জোরে ঘষুন। দ্রুত শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা মাথার মধ্যে থাকা ছত্রাক দমন করে প্রথমদিকে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত, আপনার মাথার ত্বকে প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন শুরু হবে যার ফলে আপনার চুল নরম এবং শুকনো খুশকি থেকে মুক্ত পাবেন।
নিম:- নিম খুশকির জন্য খুব ভাল নিরাময় এবং এটি বেশিরভাগ শ্যাম্পুতে পাওয়া যায় অন্যতম প্রধান উপাদান হিসাবে। কিছু পরিমান নিমপাতা নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ওই পেস্টটি ভালো করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনি কয়েকটি নিম পাতা জলে সিদ্ধ করে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। তাতেও নিয়ন্ত্রণে আসবে খুশকি ৷ নিমের নিয়মিত ব্যবহার আপনার মাথার তালুর চুলকানি কমাবে, যে ফাঙ্গাসের কারণে খুশকির বাড়বাড়ন্ত হয়, সেগুলিকে ক্রমশ অকেজো করে দেয় নিমের নির্যাস৷
লেবুর রস:- দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে আপনার মাথার ত্বকে ভালো করে ম্যাসেজ করুন। ২-৩ মিনিট রেখে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি না কমা পর্যন্ত এটি নিয়মিত পুনরাবৃত্তি করুন। লেবুর অম্লীয় চরিত্র আপনার চুলের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
অ্যালোভেরা:- অ্যালোভেরা ত্বকের জ্বালা হ্রাস করে এবং এটি ময়েশ্চারাইজিং প্রভাব ফেলে। এটি স্বচ্ছতা এবং চুলকানি হ্রাস করে এবং খুশকি থেকে মুক্তি দেয়। এটি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল যা আরও খুশকি থেকে রক্ষা করে। অ্যালোভেরা রস খুশকি ভরা মাথার ত্বকে লাগান এবং প্রায় আধা ঘন্টা রেখে দিন। এই উদ্ভিদ রসের সমৃদ্ধ উপাদানগুলো আপনার ত্বকের অনেক সমস্যাই দূর করবে।
আরও পড়ুন- দুপুরে ঘুমের অভ্যাস আছে! অজান্তেই ডেকে আনছেন নানা রোগ
পেঁয়াজের রস:- দুটি মাঝারি পেঁয়াজ ভালো করে বেটে তাতে কিছুটা পানি মিশিয়ে নিন। তারপর এই পেঁয়াজের রস মাথায় ভাল করে মাখিয়ে মিনিট পনেরো মালিশ করুন। এরপর ৫ মিনিট পর জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এ ভাবে সপ্তাহে দু-তিন বার পেঁয়াজের রস মাথায় মাখলে খুসকির সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই পাবেন।
টকদই:- খুশকির সমস্যা দূর করতে টকদই খুবই উপকারী। খুশকি দূর করতে টকদই মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট মালিশ করুন। এছাড়া আপনি দইতে কালো মরিচও যুক্ত করতে পারেন কারণ এটিতেও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই ভাবে সপ্তাহে অন্তত দু’বার ব্যবহার করুন।
মেথি বীজ:- মেথির বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা শুষ্কতা, চুল পড়া এবং খুশকি রোধ করে। এগুলি আমাদের চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং আমাদের মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে। মেথির বীজ দীর্ঘ, ঘন এবং সুন্দর চুলের চাবিকাঠি। রাতভর ভিজানো মেথির বীজগুলিকে সকালে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর মাথার ত্বকে এবং চুলের উপর ভালো করে ঘষুন। ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুল ও ত্বক দুইই ভালো থাকবে। খুশকি থেকেও রেহাই পাবেন।