রমজান হলো কল্যাণ ও বরকতের মাস। রমজানের উপকারিতা ও বরকত পরিপূর্ণরূপে লাভ করার জন্য এ মাসের করণীয় কাজগুলো মহব্বতের সাথে করা এবং কিছু বিষয় বর্জন করা। তাই জেনে নিন রমজানে কোন কাজগুলো বেশি করা উচিত আর কোন কাজগুলো বর্জন করা উচিত।
রমজান মাসের আমল
রোজা রাখা:- ইসলামে পাঁচটি ইবাদতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল রোজা। রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। রাসুল(সাঃ) যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা রাখবে তাঁর অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ্-কে খুশি করার জন্য যে ব্যক্তি একটি রোজা রাখবে, সেই ব্যক্তিকে আল্লাহ্ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবে।
কোরান তেলাওয়াত:- রমজান মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল অধিক পরিমানে কোরান তেলাওয়াত করা। এই মাসের সাথে কোরানের সম্পর্ক অনেক গভীর কারন এই মাসেই কোরান নাজিল করা হয়েছিল। রাসুল(সাঃ) অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে বেশি বেশি কোরান তেলাওয়াত করতেন।
ওমরা আদায়:- রমজানে একটি ওমরা আদায় করলে অন্য মাসের তুলনায় ৭০টি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই রাসুল(সাঃ) বলেছেন, রমজানে ওমরা আদায়ে যেন, আমার সাথে হজ আদায় করার সমতুল্য।
সাহরি খাওয়া:- সিয়াম পালনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সাহরি খাওয়া। সাহরি খাওয়া সুন্নত এবং বরকতময়। অনেকে আছেন সাহরি না খেয়ে বা অনেক রাত আগেই খেয়ে শুয়ে পড়েন। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না। তাই রাসুল(সাঃ) বলেছেন, আমাদের ও আহেলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া। তাই আমরা নিয়ম করে সাহরি খেতে ভুলে না যায়।
আরও পড়ুন- রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া
তারাবির নামাজ:- রমজানের বিশেষ আমল হল তারাবির নামাজ পড়া। এটি আল্লাহ্তালার অফুরন্ত রহমত ও মাগফেরাতের লাভের অন্যতম উপায়। রাসুল(সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করবে তাঁর পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
কল্যাণকর কাজ:- অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাস অনেক বেশি উত্তম। হাদিসে বর্ণিত রাসুল(সাঃ) বলেছেন, একজন ঘোষণাকারী বলে এ অসৎ কাজের পথিক তোমারা অন্যায়ের পথে চলা বন্ধ করো। কারন এই মাসে আল্লাহ্তালা কত বান্দাকে জাহান্নামের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি ভালো কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
বেশি বেশি জিকির করা:- রমজান মাসে অধিক পরিমানে আল্লাহ্র জিকির করা উচিৎ। সকাল সন্ধ্যা সর্বদা দরুদ শরীফ, কালেমা সহ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার এর দ্বারা জিকির করা। হজরত সামুরা বিনতে জুনদুব থেকে বর্ণিত, রাসুল(সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা হলো এই চারটি।
দান সদকা করা:- পবিত্র রমজান মাস হল পূর্ণ অর্জন করার মাস। তাই রমজান মাসে রোজা নামাজ করার পাশাপাশি দান সদকার মাধ্যমে অনেক নেকি অর্জন করা যায়। রাসুল(সাঃ) এই মাসে বেশি বেশি দান খাইরাত করতেন। তাই অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে দান বেশি বেশি দান খাইরাত করতে হবে।
রাইলাতুল কদর:- রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের থেকেও উত্তম তা হল রাইলাতুল কদর। রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোনো বেজোড় রাত রাইলাতুল কদর হতে পারে। যা হাদিসে বর্ণিত, আয়েশা(রাঃ) বলেন, রাসুল(সাঃ) অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিন অধিক হারে ইবাদত করতেন।
অন্যকে ইফতার করানো:- রমজান মাসে একটি বিশেষ আমল হল ইফতার করানো। রাসুল(সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ওই সিয়াম পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। এবং সিয়াম পালনকারী সওয়াব থেকে কোনো প্রকার কমতি বা ঘাটতি হবে না।
হালাল রিজিক:- ইসলামের বিধান হল হালাল রুজি। রুজি রোজগার হারাম হলে, তা আল্লাহ্র দরবারে কোনো ইবাদত কাজে দেয় না। রমজান মাসে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় আরো বহুগুণ। রাসুল(সাঃ) হালাল রুজির প্রতি যত্নবান ব্যক্তির জন্য ভবিষ্যতবানী উচ্চারন করে বলেন, যার রমজান মাস নিরাপদে কাটল তাঁর পুরো বছরই নিরাপদে কাটবে।
তওবা ও ইস্তিগফার করা:- রমাজন মাস তওবা করার উত্তম সময়। রমজান মাসে সকল বান্দার তওবা কবুল করা হয়। আর যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করতে পারল না, তাঁর ওপর আল্লাহ্র অভিশাপ বর্ষিত হয়। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি তওবা করা ও ইস্তিগফার পাঠ করা উচিৎ।
রমজান মাসে বর্জনীয়
* অশ্লীল কথাবার্তা, অশ্লীল ছবি ও নাটক, শোরগোল ও ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
* মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
* গীবত না করা।
* দৃষ্টিকে হেফাজত করা।